দ্বন্দ্বে বিএনপিতে বিভক্তি, জিল্লুল হাকিমকে আবারো চায় তৃণমূল

BREAKING

5/recent/ticker-posts

দ্বন্দ্বে বিএনপিতে বিভক্তি, জিল্লুল হাকিমকে আবারো চায় তৃণমূল

 



বিশেষ প্রতিনিধি।


পদ্মাকন্যাখ্যাত জেলা রাজবাড়ী। জেলায় সংসদীয় আসন দুইটি। জেলার পাংশা, কালুখালী ও বালিয়াকান্দি  তিনটি উপজেলা নিয়ে গঠিত রাজবাড়ী-২ আসন। এ আসনটি এখন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের দখলে। আসনটিতে একটানা তিন বার সহ চার বার ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ। আর এই চার বারের নির্বাচিত এম.পি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. জিল্লুল হাকিম। এবার দলের মধ্যে একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী রয়েছেন। একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী থাকলেও বর্তমান সংসদ সদস্য জিল্লুল হাকিম ছাড়া প্রকাশ্যে মাঠে নেই কেউ।  আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কর্মী সমাবেশে ব্যস্ত সময় পার করছেন বর্তমান সংসদ সদস্য জিল্লুল হাকিম। তার হাত ধরে আবারও দলটির জয় চায় তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। 



দীর্ঘদিন ক্ষমতায় না থাকায় মাঠে নেই বিএনপি-জামায়াত সহ অন্যান্য দলের নেতা-কর্মীরা। মাঠে না দেখা গেলেও জেলা সহ জেলার বিভিন্ন উপজেলার দলীয় কার্যালয়ে ঘরোয়া পরিবেশে সভা-সমাবেশ করছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। তাদের দলের মধ্যে একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব আছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। 



বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য নাসিরুল হক সাবু ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ হারুনের মধ্যে দির্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে ।

 


নেতা-কর্মীরা এই দুই নেতার অনুসারী হয়ে মাঝে মধ্যে আলাদা ভাবে কর্মসূচি পালন করছে। বিএনপি নির্বাচনে গেলে এ দুজনের মধ্যে যে কেউ মনোনয়ন পাবেন। তবে দলীয় কোন্দল ও গ্রুপিংয়ের কারণে বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচি দিলে, তা বাস্তবায়নে হিমশিম খেতে হচ্ছে দলটির নেতা-কর্মীদের। ফলে বিএনপির রাজনীতিতে এখন অনেকটা অস্তিত্ব-সংকট দেখা দিয়েছে।



জানা গেছে, এ আসনে চারবার আওয়ামী লীগ, দুইবার বিএনপি, একবার জামায়াতে ইসলামী, দুইবার জাতীয় পার্টি ও দুবার জাসদ মনোনীত প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। 



২০০৮ সাল থেকে এ আসনের সংসদ সদস্য জিল্লুল হাকিম। আগামী নির্বাচনেও তিনি দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। এছাড়াও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শেখ সোহেল রানা টিপু, কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নূরে আলম সিদ্দিকী হকসহ বেশ কয়েকজন মনোনয়ন দৌড়ে রয়েছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।



রাজবাড়ী-২ আসনে তিনটি উপজেলা। ২৪টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা রয়েছে। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে সাংসদ জিল্লুল হাকিমকে প্রধান অতিথি করে এরই মধ্যে ২৪টি ইউনিয়নেই কর্মী সমাবেশ করেছে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ। কর্মী সমাবেশে হাজার হাজার নেতা-কর্মীর স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ লক্ষ করা গেছে। কর্মী সমাবেশে আসা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের তৃণমূল নেতাকর্মীরা জানান, জেলার উন্নয়নের ধার অব্যাহত রাখতে ও দলকে আরও শক্তিশালী করতে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বর্তমান সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. জিল্লুল হাকিম কে আবারো এমপি হিসেবে দেখতে চান। 





পাংশা উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি মো. সামসুল আলম মৃধা বলেন, জিল্লুল হাকিম একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি দেশ ও দেশের জনগণকে ভালোবাসেন। সেই ভালোবাসা নিয়েই তার নির্বাচনী এলাকার স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দীর, ঈদগাহ, কবরস্থান, রাস্তাঘাট, ব্রীজ, কালভাট, শতভাগ বিদ্যুৎ সহ সকলস্তরে উন্নয়ন ঘটিয়েছেন এবং দলকে সুসংগঠিত রেখেছেন।







কালুখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মদাপুর ইউনিয় পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান বলেন, রাজবাড়ী-২ আসনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে কোন গ্রুপিং নেই। এটা শুধু তার কারণেই সম্ভব হয়েছে। সাধারণ মানুষের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের মাধ্যমে সঠিক ভাবে পৌছে দিয়েছেন। সাধারণ মানুষের নিরাপদ যোগ্য বসবাস নিশ্চিত করেছেন। এ জন্য তৃণমূলের জনসাধারণও তাকে আবারো এমপি হিসেবে দেখতে চায়।






নির্বাচন নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জিল্লুল হাকিম বলেন, করোনা মহামারিতে সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করেছি। চিকিৎসকদের সহযোগীতা করেছি। খাদ্য সহায়তা সহ বিভিন্ন সহায়তা করে মানুষের পাশে থেকেছি এবং মানোনীয় প্রধারমন্ত্রী দেওয়া সকল প্রকার বরাদ্দ স্থানীয় নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে সঠিক ভাবে বন্ঠণ করেছি। নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন উন্নয়ন সহ জনসাধারণের অধিকার নিশ্চিতে কাজ করেছি। সাধারণ মানুষ তার ফল স্বরুপ আমাকে আবারো এমপি হিসেবে দেখতে চায়।




পাংশা সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি মো. হাবিবুর রহমান রাজা বলেন, দিনের ভোট রাতে নেওয়া সরকারের প্রতি এবং নির্বাচন কমিশনারের আমাদের কোন আস্থা নাই। বর্তমান সরকারের পদত্যাগ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার অধিনে নির্বাচন চাই। বিএনপি নির্বাচনে এলে আমি সহ অনেকেই মনোনয়ন চাইবে।



রাজবাড়ী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. নাসিরুল হক সাবু বলেন, এই মুহূর্তে তত্ত্বাবধায়ক বা নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া আমরা কোনো কিছু ভাবছি না। অবশ্যই বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মেনে মাঠপর্যায়ে কাজ করব। বিএনপি একটি বড় দল। এখানে গ্রুপিং থাকতেই পারে। তবে রাজবাড়ীতে যাঁরা গ্রুপিং সৃষ্টি করছেন, খোঁজ নিয়ে দেখুন তাঁরা আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় রয়েছেন। বিএনপি দল ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করবে জানান তিনি।



জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আরুন অর রশিদের মুঠোফোনের একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এ জন্য তার মতামত নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে বর্তমানে বিএনপির রাজনীতিতে তিনি সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে বিএনপির একাধিক সূত্রে জানা গেছে।






নির্বাচন সম্পর্কে রাজবাড়ী জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক মো. হেলাল মাহমুদ বলেন, নির্বাচনকে ঘিরে ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটি গঠন করা হচ্ছে। কমিটি গঠন সম্পুর্ণ হলে জেলায় বড় পরিশরে সমাবেশ করা হবে। সংসদ নির্বাচনে দল থেকে যোগ্য ব্যক্তিকে মনোনয়ন দিলে আমাদের প্রার্থী জয়লাভ করবে।